বাংলাদেশকে লজ্জায় ডুবাল ভারত
বাংলাদেশের ক্রিকেটার আর সমর্থকদের জন্য দিনটা ভুলে যাওয়ার মতোই। এমন লজ্জাজনক দিন বোধহয় আর কখনও দেখেনি টাইগার ক্রিকেট। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচেও বাংলাদেশকে লজ্জায় ডুবাল ভারত। শনিবার (১২ অক্টোবর) হায়দারাবাদের রাজীব গান্ধী স্টেডিয়ামে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে টাইগার বোলারদের রীতিমতো তুলোধুনো করে ভারতীয় ব্যাটাররা। সাঞ্জু স্যামসনের সেঞ্চুরি ও সূর্যকুমারের হাফ-সেঞ্চুরিতে রেকর্ড ২৯৭ রান করে ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেটে ১৬৪ রান করে বাংলাদেশ। এতে ১৩৩ রানের বড় ব্যবধানে হারে সফরকারীরা।ঠিক কতটা লজ্জা বলা যায় একে? টি-টোয়েন্টিতে পূর্ণ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কারা সবচেয়ে বেশি রান হজম করেছে- এ প্রশ্নের উত্তরে যে দেশটার নাম আসে, সেটা হলো বাংলাদেশ। হায়দারাবাদে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে রিশাদ হোসেন-তাসকিনদের ওপর তাণ্ডবলীলা চালিয়ে ২৯৭ রান করে ভারত।
পূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে আগের সর্বোচ্চ রান হজম করার নজিরটি ছিল আয়ারল্যান্ডের। ২০১৯ সালে তাদের বিপক্ষে ২৭৮ রান করেছিল আফগানিস্তান। টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান হজম করার লজ্জাটা মঙ্গোলিয়ার। গত বছর হাংঝুতে তাদের বিপক্ষে ৩১৪ রান করেছিল নেপাল, একটুর জন্য অক্ষত রইল সেই রেকর্ড। আবার পূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে সবচেয়ে বেশি রান করার রেকর্ডটি এখন ভারতের। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে বেশি বাউন্ডারি হজম করার লজ্জাটিও এখন বাংলাদেশের। এই ম্যাচে চার-ছয় মিলিয়ে ৪৭টি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছে ভারত। লজ্জা থেকে বাঁচল তুরস্ক, ২০১৯ সালে তাদের বিপক্ষে ৪৩টি বাউন্ডারি মেরেছিল চেক প্রজাতন্ত্র। কলম্বো সিসি, শ্রীলঙ্কা ও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে মুক্তি দিয়ে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টির কোনো ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ওভারে ১০ বা তার বেশি রান দেয়ার লজ্জা এখন বাংলাদেশের। ভারতের বিপক্ষে এই ম্যাচে ১৮টি ওভারে ১০ বা তার বেশি রান দিয়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর বোলিং অ্যাটাক। ১৭টি করে ওভারে ১০ বা তার বেশি রান দিয়েছিল কলম্বো, শ্রীলঙ্কা ও মুম্বাই।
টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এটিই টাইগারদের সবচেয়ে বড় ব্যবধানের হার। এর আগে ২০২২ সালের অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১০৪ রানের ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। আজ হায়দারাবাদে সেই রেকর্ড ছাপিয়ে নতুন রেকর্ড গড়লো লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ভারতের কাছে ১৩৩ রানের হারই এখন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে হার।
বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই আউট হন পারভেজ ইমন। মায়াঙ্ক যাদবের শর্ট লেংথের বল সার্কেলের ভিতরে থাকা রিয়ান পরাগের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন এই ওপেনার। চতুর্থ ওভারে বল করতে আসেন ওয়াশিংটন সুন্দর। তার করা প্রথম বলেই আউট হন তানজিদ হাসান। অফ স্টাম্পের বাইরের বল ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে থাকা বরুণ চক্রবর্তীর হাতে ক্যাচ তুলে দেন এই ওপনার। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১২ বলে ১৫ রান।
পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভার করতে আসেন রবি বিষ্ণুই। ওভারের দ্বিতীয় বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। একটু সামনে এসে বলটি গ্লাভসবন্দি করেন সাঞ্জু স্যামসন। বিষ্ণুইয়ের সেই ওভারে কোনও রান যোগ করতে পারেনি বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভার শেষে ৩ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে জমা হয় ৫৯ রান। ২৫ বলে ৪২ রান লিটনকে থামান বিষ্ণুই। তার বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে থাকা বদলি ফিল্ডার তিলক ভার্মার হাতে ধরা পড়েন ডানহাতি এই ব্যাটার।
ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটা রাঙাতে পারলেন না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বল হাতে দুই ওভার হাত ঘুরিয়ে ২৬ রান খরচায় একটি উইকেট নিয়েছেন। তবে ব্যাট হাতে হয়েছেন ব্যর্থ। দলের বিপর্যয়ের সময় হাল ধরতে পারেনি। ৯ বল খেলে করেছেন মাত্র ৮ রান। মায়াঙ্ক যাদবকে উড়িয়ে মাড়তে গিয়ে বাউন্ডারির কাছে ধরা পড়েন মাহমুদউল্লাহ। এটিই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে তার শেষ শট।
শেখ মেহেদী হাসান, রিশাদ হোসেনরাও ব্যবধান কমাতে পারেননি। ৯ বল খেলে ৩ রান করে সাজঘরে ফেরেন মেহেদী হাসান। অন্যদিকে রিশাদ হোসেন আউট হন শূন্য রানে। এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকেন তাওহীদ হৃদয়। শেষ পর্যন্ত ৪২ বলে ৬৩ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন হৃদয়। অপর প্রান্তে ৮ বলে ৮ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন তানজিম সাকিব। ভারতের হয়ে রবি বিষ্ণুই নেন তিনটি উইকেট। মায়াঙ্ক যাদব দুটি, ওয়াশিংটন সুন্দর ও নিতিশ রেড্ডি নেন একটি করে উইকেট। এর আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দুই ওভারে ২৩ রান দিয়ে বাজে শুরু হয় বাংলাদেশের। পরের ওভারে বল হাতে নিয়েই উইকেট এনে দেন তানজিম সাকিব। মিডউইকেটে ক্যাচ ধরেন শেখ মেহেদী, উইকেট নিলেও ওই ওভারে ১২ রান খরচ করেন সাকিব। তিনি আগের ম্যাচেও অভিষেকের উইকেট নিয়েছিলেন। উইকেট হারালেও রানের গতি থামায়নি ভারত। পাওয়ারপ্লের মধ্যেই তারা স্কোবোর্ডে তুলে ৮২ রান, স্যামসন-সূর্যকুমারের জুটি হয় ৫৯ রানের। টি-টোয়েন্টির পাওপারপ্লেতে ভারতের এটা যৌথভাবে সর্বোচ্চ রান। ২০২১ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে পাওয়ারপ্লেতে ২ উইকেট ৮২ রান করেছিল তারা।
২০১৯ সালে রাজকোটে ২৩ বলে হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন রোহিত শর্মা। সেটা ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের কোনো ব্যাটারের দ্রুততম ফিফটি। রোহিতের রেকর্ড দখলে নিয়েছেন স্যামসন। ২২ বলে অর্ধশত রান করেছেন তিনি। দলীয় দশম ওভারে দ্বিতীয় বার বল হাতে নেন রিশাদ। প্রথম বলটি ডট দেন তিনি। পরের ৫ বলেই ছক্কা হাঁকান স্যামসন। ফলে ১০ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১৫২। স্যামসন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম সেঞ্চুরিটি হাঁকান ৪০ বলে। পূর্ণ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে এর চেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরি আছে আর মাত্র ৩টি। ৩৫ বলে দ্রুততম সেঞ্চুরিটি ডেভিড মিলারের।
১৭৩ রানের জুটির পর ভাঙে স্যামসন-সূর্যকুমারের জুটি। মুস্তাফিজুর রহমানের শিকার হওয়া স্যামসন ক্যাচ দেন মেহেদীকে। ৪৭ বলে ১১১ রানের ইনিংসে ১১টি চার ও ৮টি ছক্কা মারেন উইকেটরক্ষক ব্যাটার। একটু পর সূর্যকুমারও ক্যাচ তুলে বিদায় নেন। বিদায়ী রিয়াদের শিকার হওয়ার আগে ৩৫ বলে ৭৫ রান করেন তিনি।এরপর শুরু হয় হার্দিক পান্ডিয়ার নান্দনিক ব্যাটিং প্রদর্শনী ও পরাগের তাণ্ডব। ১৩ বলে ৩৪ রান করে পরাগ প্যাভিলিয়নে ফিরলে ভাঙে তাদের জুটি। পান্ডিয়াও একটু পর বিদায় নেন। ১৮ বলে তিনি করেন ৪৭ রান। রিংকু সিং ৮ ও ওয়াশিংটন সুন্দর করেন ১ রান। বাংলাদেশের হয়ে তানজিম সাকিব নেন তিন উইকেট। মাহমুদউল্লাহ, মুস্তাফিজ ও তাসকিন নেন একটি করে উইকেট।
মতামত দিন