হাতিরঝিল থেকে সাংবাদিকের মরদেহ উদ্ধার
রাজধানীর হাতিরঝিলের পানি থেকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল জি-টিভির সাংবাদিক রাহানুমা সারাহর (৩২) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আজ বুধবার (২৮ আগস্ট) সকালে হাতিরঝিল থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) তমেজ উদ্দীন এ তথ্য জানিয়েছেন।
উপপরিদর্শক তমেজ উদ্দীন জানান, রাত পৌনে একটার দিকে আরিফ নামের এক ব্যক্তি বাসায় যাচ্ছিলেন। সে সময় তিনি রাহানুমাকে অচেতন অবস্থায় ভেসে থাকতে দেখেন। পরে তিনিই তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যান। সে সময় চিকিৎসক রাহানুমাকে মৃত ঘোষণা করেন।তমেজ উদ্দীন আরও জানান, আরিফ রাহানুমার কাছে তার মুঠোফোনটি পান। তারপর তার পরিবারকে ঘটনাটি জানান। মা-বাবা ও ভাই হাসপাতালে যান রাতেই। তিনি কীভাবে মারা গেছেন তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে সামাজিকমাধ্যমে ফেসবুকে রাহানুমা সারাহর লেখেন- তোমার মত বন্ধু পেয়ে আমি ভগ্যবান। আল্লাহ তোমাকে সর্বদা মঙ্গল করুন। আশা করি, শীঘ্রই তোমার সব স্বপ্ন পূরণ হবে। আমি জানি আমরা একসঙ্গে অনেক পরিকল্পনা করেছি। দুঃখিত, আমাদের পরিকল্পনা পূরণ করতে পারছি না। আল্লাহ তোমার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আশীর্বাদ করুন। এর কিছুক্ষণ আগে আরও একটি পোস্টে তিনি লেখেন- জীবন্মৃত হয়ে থাকার চাইতে মরে যাওয়াই ভাল।
বুধবার (২৮ আগস্ট) সকাল ১০টার দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সাংবাদিক রাহানুমা সারাহর মৃত্যুর কারণ ইঙ্গিত দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। তাতে তিনি লেখেন, ‘গাজী টিভির নিউজরুম এডিটর সারাহ রাহানুমাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ঢাকার হাতিরঝিল লেক থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর এটি আরেকটি নৃশংস হামলা। গাজী টিভি ধর্মনিরপেক্ষ সংবাদ চ্যানেল। যার মালিক গোলাম দস্তগীর গাজী সম্প্রতি গ্রেপ্তার হয়েছেন।’
সারাহর স্বামী সায়েদ শুভ্র বলেন, সম্পর্কের মাধ্যমে সাত বছর পূর্বে আমরা পরিবারকে না জানিয়ে বিবাহ করেছিলাম। গতকাল সারাহ অফিসে গিয়ে রাতে আর বাসায় না ফিরে এক ব্যক্তিকে দিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসা ভাড়ার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিল। তিনি বলেন, পরে আমি তাকে ফোন করে বলি রাতে তো তুমি বাসায় আসতে তাহলে অন্যকে দিয়ে কেন টাকা পাঠিয়ে দিয়েছো? তখন সে বলল আমি ব্যস্ত আছি বলে ফোন রেখে দেয়। পরে রাত ৩টার দিকে খবর পাই সে হাতিরঝিল লেকের পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে। পরে ঢামেক এসে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই।তিনি আরও বলেন, তবে আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়াও হয়নি তবে বেশ কিছুদিন আগ থেকে আমার স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে চাচ্ছে। আমরা দুজনই কাজী অফিসে গিয়ে ডিভোর্স দিয়ে আসব। দেশের এই পরিস্থিতিতে আর কাজী অফিসে যাওয়া হয়নি।
রাহানুমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া পথচারী সাগর জানান, ওই নারীকে ঝিলের পানিতে ডুবতে দেখেন তিনি। এরপর তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান ওই নারী আর বেঁচে নেই।
মতামত দিন