রূপচর্চা নিয়ে ইসলামে বিধিনিষেধ ও নির্দেশনা
স্বাভাবিকভাবে রূপচর্চা বা সাজসজ্জা হারাম নয়। আল্লাহ তাআলা ও তার রসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব বিধিনিষেধ দিয়েছেন তার সাথে সাংঘর্ষিক না হলে দুনিয়াবি যেকোনো কাজ জায়েজ।
সাজসজ্জার বিষয়টি সাহাবায়ে কেরামের যুগ থেকেই দেখা যায়। একবার হজরত আয়মান (রহ.) বলেন, আয়েশা (রা.)-এর কাছে আমি হাজির হলাম। তার গায়ে তখন পাঁচ দিরহাম মূল্যের মোটা কাপড়ের কামিজ ছিল। তিনি আমাকে বলেন, আমার এই বাঁদির দিকে চোখ তুলে একটু তাকাও, ঘরের ভেতরে এটা পরতে সে অপছন্দ করে।
অথচ রসুলুল্লাহ (সা.)-এর জামানায় মদিনায় মেয়েদের মধ্যে আমারই শুধু একটি কামিজ ছিল। মদিনায় কোনো মেয়েকে বিয়ের সাজে সাজাতে গেলেই আমার কাছে কাউকে পাঠিয়ে ওই কামিজটি চেয়ে নিত (সাময়িক ব্যবহারের জন্য)। (বুখারি ২৪৫২)
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পরেও সাজ-সজ্জা করা ও রূপচর্চা করা এক সময় শুধু নারীদের কাজ হলেও এটা এখন পুরুষদেরও করতে দেখা যায়। যে কেউই করুক না কেন। আলেমগণ তাদের জন্য কোরআন ও হাদিস থেকে বেশ কিছু দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
নারীরা মাহরাম ১৪ শ্রেণির পুরুষ ও নারীসদৃশ হিজড়াদের সামনে স্বাভাবিক অঙ্গের সাজসজ্জা প্রদর্শন করতে পারবে। গায়রে মাহরাম পুরুষদের দেখানোর জন্য রূপচর্চা জায়েজ নয়। এতে রূপচর্চাকারী গুনাহগার হবে। জাহেলি যুগের মতো নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করো এবং প্রাচীন জাহেলিয়াতের নারীদের মতো সাজগোজ ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করে ঘোরাফেরা কোরো না।’ (সুরা আহজাব ৩৩)
পুরুষদের ক্ষেত্রেও নারীদের আকর্ষিত করার জন্য কোনো প্রকার সাজসজ্জা করা যাবে না।
রূপচর্চা বা সাজসজ্জার কয়েকটি মূলনীতি
এক. যে কাজ ইসলামে অবৈধ সে কাজ কারো জন্যই করা জায়েজ নয়। এমনকি স্বামী বা স্ত্রীকে খুশি করার জন্য করাও জায়েজ নয়। স্বামীকে খুশি করার জন্য যেমন ভ্রূ বিকৃত করা যাবে না তেমনই স্ত্রীকে খুশি করার জন্য দাড়ি মুণ্ডানো যাবে না। কোনো স্ত্রী যদি মনে করেন স্বামীর আদেশ মানতে হবে তাহলে তার উচিত নবীজির এই হাদিস স্মরণ করা।হজরত ইবনে উমর (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির কর্তব্য হলো পছন্দ হোক বা অপছন্দ সর্বাবস্থায় আমিরের কথা শোনা ও মান্য করা, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে আল্লাহর নাফরমানির নির্দেশ দেয়া হয়। তবে তাকে নাফরমানির নির্দেশ দেয়া হলে তখন আর শোনা ও মান্য করা যাবে না।’ (তিরমিজি ১৭০৭)
দুই. রূপচর্চা করতে গিয়ে নারী পুরুষের বা পুরুষ নারীর রূপ ধারণ করতে পারবে না। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী করিম (স.) ওই সব পুরুষকে লানত করেছেন, যারা নারীর বেশ ধরে এবং ওই সব নারীকে, যারা পুরুষের বেশ ধরে। (বুখারি ৫৮৮৫)
তিন. রূপচর্চার ক্ষেত্রে কোনো অমুসলিম, ফাসেক কিংবা কথিত নায়ক-নায়িকাদের অনুসরণ করা যাবে না। হজরত ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের অনুসরণ-অনুকরণ করবে সে তাদের দলভুক্ত হবে।’ (আবু দাউদ ৩৯৮৯)
চার. রূপচর্চার জন্য নাপাক বা ক্ষতিকর প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না। বর্তমান যুগে যারা নিয়মিত মেকাপ করে তাদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা শোনা যায়। তাই প্রসাধনী ব্যবহারের সময় লক্ষ রাখতে হবে সেসব ক্ষতিকর কি না। কেননা রসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘ক্ষতি ও ক্ষতি সাধনের কোনো অনুমতি নেই।’ (দারাকুতনি ৩০৭৯)
পাঁচ. আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করা যাবে না। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া প্লাস্টিক সার্জারি করে শরীর পরিবর্তন করা জায়েজ নেই। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আল্লাহ তাআলা লানত করেছেন ওই সব নারীর প্রতি, যারা অন্যের শরীরে উলকি অঙ্কন করে, নিজ শরীরে উলকি অঙ্কন করায়, যারা সৌন্দর্যের জন্য ভ্রূ উপড়িয়ে ফেলে এবং দাঁতের মধ্যে ফাঁক সৃষ্টি করে। এসব নারী আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি সাধন করে। (বুখারি ৪৫২৫)
মতামত দিন