গ্যাসসংকটে যমুনা সার কারখানা সার উৎপাদনবন্ধ
গ্যাসসংকটের কারণে দীর্ঘ ৭ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের বৃহত্তম সার কারখানা জামালপুরের তারাকান্দি যমুনা সার কারখানাটি। বন্ধ রয়েছে ইউরিয়া সার উৎপাদন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এখন কারখানার মূল্যবান যন্ত্রপাতিও মরিচা ধরে অকেজো হওয়ার পথে।
অপরদিকে কারখানার সঙ্গে জড়িত থাকায় হাজারো শ্রমিক পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসার অবস্থা উপক্রম হয়েছে। এদিকে কারখানা বন্ধ থাকায় সামনে রোপা-আমন মৌসুমে যমুনার সারনির্ভর এই এলাকার ১৬টি জেলায় সারসংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
কারখানা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে প্রতিষ্ঠিত হয় যমুনা সার কারখানা। বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন কেপিআই-১ মানসম্পন্ন যমুনা সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে দৈনিক এক হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করে আসছিল। কারখানার নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪২-৪৩ পিএসআই গ্যাসের প্রয়োজন। গ্যাসের চাপ স্বল্পতা ও বিভিন্ন ত্রুটির কারণে উৎপাদন কমে ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন হয়। যমুনা সার কারখানায় গত ১৫ জানুয়ারি থেকে গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। এরপর থেকেই যমুনায় ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কারখানার মূল্যবান যন্ত্রাংশ মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার পথে। দ্রুত গ্যাসসংযোগ দিয়ে বৃহৎ এ শিল্প কারখানা সচল করতে না পারলে পুরোপুরি অকেজো হওয়ার আশঙ্কা করছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
যমুনা সার কারখানা থেকে জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী ছাড়াও উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার প্রায় আড়াই হাজার ডিলার সার নেয়। দীর্ঘ সময় উৎপাদন বন্ধ থাকলে কারখানার কমান্ডিং এরিয়ায় সারসংকটের আশঙ্কায় সার ব্যবসায়ীরা।
এলাকার কৃষক আলমগীর হোসেন, জয়নাল মিয়া, আশরাফ হোসেন ও সামাদ মিয়াসহ অনেকেই জানান, যমুনার সার জমিতে ব্যবহারে ফসল বৃদ্ধি পায়। গাছও সতেজ হয়। বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা সার জমিতে ব্যবহার করলে ফসল ভালো হয় না। জমির উর্বরতা কমে যায়। এভাবে দীর্ঘদিন যমুনা সার কারখানা বন্ধ থাকলে পূর্বপুরুষের ব্যবহার করা এই সারসংকটে উৎপাদন ব্যাহতের কথাও জানান তারা।
কারখানার শ্রমিক মজনু মিয়া, সুলতান মাহমুদ, লেবু মিয়া ও কাদের শেখ বলেন, ‘আমাদের জীবনযাপন বেশ কষ্টকর হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কারখানার অনেক যন্ত্রাংশও অকেজো হয়ে যাচ্ছে।’ এভাবে বন্ধ থাকলে একসময়ে চলমান চিনি, পাট শিল্পের মতো এ শিল্পটিও বন্ধ হয়ে যাবে বলে কারখানার শ্রমিকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
তারাকান্দি ট্রাক ও ট্যাংকলরি মালিক সমিতির সহসভাপতি মশিউর রহমান বলেন, ‘কারখানার সঙ্গে জড়িত প্রায় তিন থেকে চার শতাধিক পরিবহন। দীর্ঘদিন ধরে কারখানা বন্ধ থাকায় এ পরিবহন শ্রমিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।’ যমুনা সার কারখানায় গ্যাসসংযোগ দিয়ে পরিবহন শ্রমিক, ব্যবসায়ীদের মানবেতর জীবন যাপন থেকে রক্ষার দাবি পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতাদের।
যমুনা সার কারখানার শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান আলী বলেন, ‘যমুনা সার কারখানায় এক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করতে খরচ লাগে ১৮-২০ হাজার টাকা। আর দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে এক টন সারের খরচ লাগে প্রায় এক লাখ টাকা। আমদানিনির্ভরতা থেকে সরে দাঁড়িয়ে দেশীয় শিল্পকে সচল রাখা হলে দেশের রাজস্ব বাড়বে। এতে বাইরে থেকে সার আনতে সরকারের ভর্তুকি ভার বহন করতে হবে না।’ কারখানা বন্ধ থাকায় প্রতিদিন সাড়ে ৩ কোটি টাকা সরকারের রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে বলে জানান এ শ্রমিক নেতা।
যমুনা সার কারখানার উপপ্রধান প্রকৌশলী (রসায়ন) ফজলুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গ্যাসসংযোগ না থাকায় দীর্ঘ ৬ মাসের বেশি সময় ধরে কারখানা বন্ধ। কারখানায় বড় ধরনের কোনও ত্রুটি নেই। ছোট ছোট যা ছিল তা সারানো হয়েছে আগেই। গ্যাস পেলে কারখানা পুনরায় চালু করা হবে।’
সূত্র-বাংলা ট্রিবিউন
মতামত দিন