খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও উত্তম আদর্শ
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উত্তম নির্দেশনা দিয়েছেন মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রেও উত্তম আদর্শ তিনি। খাবার সংক্রান্ত তার দেয়া নির্দেশনাসমূহ তুলে ধরা হলো।
খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা
রসুলুল্লাহ (সা.) খাবারের শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতেন এবং অন্যদেরও বলতে উৎসাহিত করতেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর নাম নিয়ে ও ডান হাত দ্বারা খানা খাও। এবং তোমার দিক হতে খাও।’ (বুখারি ৫১৬৭)
দস্তরখানা বিছিয়ে খাওয়া
রসুলুল্লাহ (সা.) খাওয়ার সময় দস্তরখানা বিছিয়ে খেতেন। তিনি এ ব্যাপারে অনেক যত্নশীল ছিলেন। আনাস (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) কখনো ‘সুকুর্জা’ অর্থাৎ ছোট ছোট পাত্রে আহার করেছেন, তার জন্য কখনো নরম রুটি বানানো হয়েছে কিংবা তিনি কখনো টেবিলের ওপর আহার করেছেন বলে আমি জানি না।’ জিজ্ঞেস করা হলো, তাহলে তারা কীসের ওপর আহার করতেন। তিনি বললেন, ‘দস্তরখানার ওপর।’ (বুখারি ৫৩৮৬)
ডান হাত দিয়ে খাবার খাওয়া
রসুলুল্লাহ (সা.) আজীবন ডান হাত দ্বারা খাবার খেয়েছেন এবং বাম হাত দ্বারা খাবার খেতে মানুষকে নিষেধ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা বাম হাত দ্বারা খাবার খেয়ো না ও পান কোরো না। কেননা শয়তান বাম হাতে খায় ও পান করে।’ (তিরমিজি ১৯১২)
হাত চেটে খাওয়া
রসুলুল্লাহ (সা.) খাওয়ার সময় সর্বদা হাত চেটে খেতেন। না চাটা পর্যন্ত কখনো হাত মুছতেন না। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করবে, তখন হাত চাটা না পর্যন্ত তোমরা হাতকে মুছবে না।’ (বুখারি ৫২৪৫)
অন্য হাদিসে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা যখন খাবার গ্রহণ করো তখন আঙুল চেটে খাও। কেননা বরকত কোথায় রয়েছে তা তোমরা জানো না।’ (ইবনে মাজাহ ১৯১৪)
পড়ে যাওয়া খাবার তুলে খাওয়া
খাবার গ্রহণের সময় দেখা যায় অনেকের থালাবাসন থেকে খাবারের অংশ পড়ে যায়। এরকম হলে তখন তা তুলে খেতে হবে। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর খাবারকালে যদি কোনো খাবার পড়ে যেত, তাহলে তিনি তুলে খেতেন।
হেলান দিয়ে না খাওয়া
মহানবী (সা.) কোনো কিছুর ওপর হেলান দিয়ে খাবার খেতে নিষেধ করেছেন। আবু হুজাইফা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রসুলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে ছিলাম। তিনি এক ব্যক্তিকে বললেন, ‘আমি টেক লাগানো অবস্থায় কোনো কিছু ভক্ষণ করি না’। (বুখারি ৫১৯০, তিরমিজি ১৯৮৬)
খাবারে ফুঁ না দেয়া
খাবারের মধ্যে ফুঁক দেয়া অনেক রোগ পয়দা হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রসুলুল্লাহ (সা.) খাবারে ফুঁ দিতে নিষেধ করেন। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) কখনো খাবারে ফুঁ দিতেন না। ফুঁ দিতেন না কোনো কিছু পানকালেও। (ইবনে মাজাহ ৩৪১৩)
খাওয়া শেষে দোয়া পড়া
খাবার খাওয়া শেষ হলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করা অপরিহার্য। রসুলুল্লাহ (সা.) খাওয়ার শেষে দোয়া পড়তেন। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) খাবার শেষ করে বলতেন, ‘আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসিরান ত্বয়্যিবান মুবারাকান ফিহি, গায়রা মাকফিইন, ওলা মুয়াদ্দায়িন ওলা মুসতাগনা আনহু রাব্বানা।’
তিনি কখনো এই দোয়া পড়তেন : ‘আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি আতআমানা ওয়াছাকানা ওয়াজাআলানা মিনাল মুসলিমিন।’ (বুখারি ৫৪৫৮)
মতামত দিন